পরিবেশগত কারণে আজ থেকে আগামী ৯ মাস পর্যটকদের জন্য বন্ধ সেন্টমার্টিন দ্বীপ
- By Jamini Roy --
- 01 February, 2025
পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন আগামী ৯ মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে পর্যটকদের জন্য দ্বীপে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলও বন্ধ থাকবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি পর্যটন মৌসুমে শেষবারের মতো গতকাল (৩১ জানুয়ারি) পর্যটকদের সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়। এর আগে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, শুধুমাত্র ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও রাতযাপনের অনুমতি পাবেন। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে সেই সুযোগও থাকছে না।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু অতিরিক্ত পর্যটনচাপ এবং মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে দ্বীপটির পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, প্রবাল সংকট, প্লাস্টিক দূষণ, ওভারট্যুরিজম ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণে সেন্টমার্টিন ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এ কারণেই দ্বীপকে রক্ষা করতে সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ চার মাসের জন্য পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এবার সেটি ৯ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দ্বীপটিকে সংরক্ষণ করার জন্য নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হবে। এছাড়া পর্যটকদের লাগামহীন প্রবেশ বন্ধ করা গেলে দ্বীপের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হতে পারে।
সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ আবদুর রহিম জিহাদী বলেন,
"সেন্টমার্টিনে আগে কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পর্যটন বন্ধ হলে দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। দ্বীপের শত শত মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।"
ব্যবসায়ীদের দাবি, অন্তত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য দ্বীপ উন্মুক্ত রাখা হোক। কারণ, এই সময়ে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে, যা দ্বীপের স্থানীয় অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন,
"এই দ্বীপের প্রায় ১০,৫০০ মানুষের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। তারা পর্যটন মৌসুমের আয় দিয়ে সারা বছর সংসার চালান। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলে দ্বীপের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়বেন।"
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশবিদ ড. জহিরুল ইসলাম বলেন,
"সেন্টমার্টিনের প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করা জরুরি। টানা ৯ মাস পর্যটন বন্ধ থাকলে প্রবাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।"
এদিকে, কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের মতে, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়, বরং পর্যটন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত করা উচিত।
সরকার এখনো পর্যটন পুনরায় চালু করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, পরবর্তী ৯ মাস দ্বীপের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও ব্যবসায়ীরা এখন সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছেন, পর্যটন বন্ধের পাশাপাশি বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করা হোক। বিশেষ করে মৎস্য খাত, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও সরকারি সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।